একসময় শান্ত, পরিচ্ছন্ন ও সুপরিকল্পিত নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল কুমিল্লা। ‘ব্যাংক ও ট্যাংকের’ শহর নামে পরিচিতি পাওয়া এই নগর এখন যেন সিএনজি ও ইঞ্জিনচালিত অটোরিকশার দখলে।
নিজস্ব সংবাদদাতা,কুমিল্লা।।
বেহাল সড়ক, অবৈধ স্ট্যান্ড আর হকারদের অনিয়ন্ত্রিত দখলদারিত্বে প্রতিদিনই তীব্র যানজটে জর্জরিত হচ্ছে নগরবাসীর জীবন। শহরের চাহিদার তুলনায় অন্তত পাঁচগুণ বেশি অটোরিকশা প্রতিদিন চলাচল করছে কুমিল্লার রাস্তায়। ফলে নগরজুড়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে যানজট। চকবাজার, রাজগঞ্জ, রানীর বাজার, টমসন ব্রিজ, শাসনগাছা, কান্দিরপাড়সহ প্রধান সড়কগুলোতে দিনের অধিকাংশ সময় যানজটে স্থবির হয়ে থাকে গাড়ি। গর্ত হয়ে বেহাল সড়ক তার সঙ্গে দুই পাশ দখল করে হকারদের দোকান সব মিলিয়ে নগরবাসীর ভোগান্তি এখন চরমে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ সিএনজি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড। যত্রতত্র রাস্তার মাঝখানে থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করায় যানজট আরও বেড়ে যায়। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মজীবী মানুষ সবাই পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।কুমিল্লা রামঘাটলা এলাকার বাবু নামে চাকরিজীবী সময় সংবাদকে বলেন, ‘সকালে বের হলে অফিসে যেতে অন্তত এক ঘণ্টা বাড়তি সময় হাতে রাখতে হয়। কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে কখনো কখনো দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। এতে প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।’কুমিল্লা দূর্গাপুর দিঘীরপাড় এলাকার মিজান সময় সংবাদকে বলেন, ‘কুমিল্লা শহরে ধারণক্ষমতার থেকে ৫/৬ গুন বেশি চলাচল করে অটোরিকশা ও সিএনজি। তার সাথে সড়কের দুইপাশ দখল করে রেখেছে হকাররা। আর অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড তো আছেই। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা নাই। যতসব ভোগান্তি সাধারণ মানুষের।’
সড়কের দুই পাশ দখল করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাখার বিষয়ে কামাল নামে এক চালক বলেন, ‘জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশে গাড়ি রাখতে হয়। এতে করে যানজট তৈরি হয় এবং মানুষের চলাচলে সমস্যা হয়। সড়কে দুই পাশে গাড়ি রাখার কারণে আমাদের টাকাও দিতে হয়। সরকার যদি নির্দিষ্ট জায়গা করে দিতো, তাহলে আমরাও রাস্তা দখল করে স্ট্যান্ড করতাম না।’এ বিষয়ে সেলিম নামে এক সিএনজি চালক বলেন, ‘আমরা যে রাস্তার পাশে সিএনজি রাখি প্রতি সিএনজি বাবদ বা নির্দিষ্ট টাকা দেওয়া লাগে। নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় এ অবৈধ সিএনজিস্ট্যান্ড করেছি। এতে মানুষের সমস্যা হচ্ছে যানজট হচ্ছে কিন্তু আমাদের কিছু করার নাই। আমরাও তো পেটের দায়ে এই কাজ করি। প্রশাসন যদি আমাদের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় করে দেয় তাহলে আমরা ওই নির্দিষ্ট স্থানে সিএনজি রাখব। এতে করে যানজট কমে যাবে। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারবে।’ যানজট নিরসন ও অবৈধ দখলের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী কুমিল্লার খরবকে বলেন, ‘যানজট নিরশনে পুলিশ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে তবে কুমিল্লা শহরে ধারণ ক্ষমতার থেকে বহুগুণ বেশি অটোরিকশা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে যে স্ট্যান্ডগুলো রয়েছে, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি।’ হকারদের অবৈধ দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। সকালে উচ্ছেদ করলে তারা বিকেলে আবার এসে বসে, বিকেলে উচ্ছেদ করলে তারা আবার সকালে এসে বসে। শুধু উচ্ছেদ করলে তো হবে না তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। জেলা প্রশাসন সিটি কর্পোরেশন পুলিশ প্রশাসন সবাই মিলে এই বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মামুন কুমিল্লার খবরকে বলেন, ‘কুমিল্লা শহরে যানজট সেটা দীর্ঘদিনের। কুমিল্লা শহরে যানজট সৃষ্টি আর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। কুমিল্লা শহরে রাস্তাগুলোর সরু, অবৈধ স্ট্যান্ড এবং ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বহু গুণ বেশি অটো রিক্সা সিএনজি চলাচল করছে। সিটি কর্পোরেশন জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন মিলে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যানজট নিরসনে এবং রাস্তা দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’নগরীর প্রধান সড়কগুলো দখলমুক্ত না করা, হকারদের জন্য নির্দিষ্ট মার্কেট গড়ে না তোলা এবং তিনচাকার জন্য নিয়মিত স্ট্যান্ড নির্ধারণ না করলে যানজট সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে বলে মনে করছেন নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, যানজট শুধু সময় নষ্ট করছে না, বরং অর্থনৈতিক ক্ষতি, মানসিক চাপ এবং শহরের স্বাভাবিক চলাচলও বাধাগ্রস্ত করছে।