এবিএম আতিকুর রহমান বাশার,দেবীদ্বার প্রতিনিধি।।
কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলায় পরিবারের সদস্যদের সাজানো নিখোঁজ নাটকের ৩৫ দিন পর শ্বশুরবাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কি থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম করিম ভূঁইয়া (৪৫)। তিনি উপজেলার বড়শালঘর মন্ত্রীপুল সংলগ্ন ভূঁইয়া বাড়ির মৃত কাসেম ভূঁইয়ার পুত্র এবং পেশায় কৃষক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলার ৩নং রসুলপুর ইউনিয়নর রসুলপুর গ্রামের গাবুদ্দি সরকার বাড়ির পাশে গোমতী নদীর সংযোগ খালের পাড়ে অবস্থিত একটি নির্মাণাধীন সেফটি ট্যাঙ্কি থেকে করিম ভূঁইয়ার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের বড় ভাই আমির হোসেন (৬০) জানান, গত ১৩ আগস্ট করিম ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার কেল্লা শাহ দরবারে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় তিনি ১৬ আগস্ট দেবীদ্বার থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি (নং-৮৩৪) করেন। নিখোঁজের পর আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, নিজ এলাকা এবং আখাউড়ার কেল্লা শাহ মাজার এলাকায় মাইকিং ও পোস্টারিং করেও কোনো সন্ধান মেলেনি।
তিনি আরও জানান, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে জানায়— করিম ভূঁইয়াকে খুঁজতে তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় দেখতে বলা হয়। পরে বিষয়টি থানাকে জানানো হলে পুলিশসহ স্বজনরা গিয়ে শ্বশুরবাড়ির পাশে গোমতী নদীর সংযোগ খালের পাড়ের সেফটি ট্যাঙ্কি থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার গলিত লাশ উদ্ধার করে।আমির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, করিম ভূঁইয়ার স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায়ই পারিবারিক কলহ চলত। নারী নির্যাতন মামলায় স্ত্রী একবার তাকে জেলেও পাঠিয়েছিল। দুই পুত্রও মায়ের পক্ষ নিয়ে তাকে রড-লাঠি দিয়ে মারধর করত। নিখোঁজের আড়ালে স্ত্রী তাছলিমা আক্তার (৪০), দুই পুত্র তানজিদ ভূঁইয়া (২২) ও তৌহিদ ভূঁইয়া (২১) এবং দুই শ্যালক কুয়েত প্রবাসী মোজাম্মেল হক (৪২) ও কৃষক ইশরাফিল (৪০) পরিকল্পিতভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং লাশ সেফটি ট্যাঙ্কিতে লুকিয়ে রাখে।তিনি আরও জানান, নিহতের দুই পুত্র মাদকাসক্ত। তারা বাবাকে চাপ দিচ্ছিল জমি বিক্রি করে তাদের বিদেশ পাঠানোর জন্য এবং তার সকল সম্পত্তি স্ত্রী ও সন্তানদের নামে লিখে দেয়ার জন্য।শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ, দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “ঘটনাটি রহস্যাবৃত। নিহত করিম ভূঁইয়ার অনেক সম্পদ ছিল। তিনি নেশাগ্রস্ত ও নারীলোভী ছিলেন, এমনকি মেয়ের দিকেও কুনজর দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রী, পুত্র ও শ্যালকরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, নিহতের স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই শ্যালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।