কুমিল্লা জেলার ইতিহাসে প্রথম নারী ওসি নাজনীন সুলতানা!

কুমিল্লা জেলার ইতিহাসে প্রথম নারী ওসি নাজনীন সুলতানা!

প্রকাশিত: ৭:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২৫

কুমিল্লা জেলার ইতিহাসে প্রথম নারী ওসি নাজনীন সুলতানা!

‎বিশেষ প্রতিবেদন।।
‎১৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা জেলায় থানার সংখ্যা ১৮। এসব থানার কোনোটিতে নাজনীন সুলতানার আগে নারী হিসেবে কেউ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করেননি। সে হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। জেলার ইতিহাসে তিনি প্রথম নারী ওসি। গত বছরের ১০ অক্টোবর তিনি কুমিল্লার লাকসাম থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান। কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীরের মতে, ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা (বর্তমান কুমিল্লা) প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৮৬১ সালে এই দেশে পুলিশি-ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তার কিছু কাল পরেই কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে বর্তমান কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার বয়স অন্তত দেড় শ বছর। তবে এখন পর্যন্ত কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় কোনো নারীকে ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়নি। আর তাঁর জানামতে, এখন পর্যন্ত লাকসামের এই ওসি ছাড়া আর কোনো নারী ওসিকে পদায়ন করা হয়নি। নাজনীন সুলতানা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি, পাশাপাশি এলএলবিও করেছেন। ২০০৭ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন তিসি। কর্মজীবন শুরু হয় ফেনী জেলা থেকে। ২০১৬ সালে তিনি পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। ২০১৮ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যান। সর্বশেষ গত বছরের ১০ অক্টোবর তিনি লাকসাম থানায় যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত লাকসাম থানার ৪০তম ওসি তিনি এবং নারী ওসি হিসেবে প্রথম। লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা কুমিল্লার খবর কে বলেন, ‘চাকরিজীবনের শুরু থেকেই দেখেছি মেয়েরা ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন খুবই কম করছেন। অনেকে এখানে আসার সাহসও করেন না। তবে আমার দীর্ঘদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল, একদিন ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দায়িত্ব পালনের প্রথম দিন থেকেই এখানকার মানুষ আমাকে সহায়তা করছেন। রাজনৈতিকভাবেও আমাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। কারণ, আমি কোনো দলের দিকে ঝুঁকে যাইনি, যেটা সঠিক, সেটাই করছি। থানায় কোনো মানুষ এলে প্রথমে চেষ্টা করি মানুষের সমস্যাটা মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য, এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই।’ পুলিশের চাকরিতে আসার পেছনের কথা জানতে চাইলে নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘পুলিশে চাকরি করব, কখনোই ভাবিনি। মূলত আমার ভাই ২০০৫ সালে এসআই পদে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তবে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পর তাঁর চাকরিটা হয়নি। এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিল, তখন আমার ভাই বললেন এখন কোনো সুপারিশ লাগবে না, যোগ্যতায় চাকরি হবে। ভাই বলাতে আমি আবেদন করি। এরপর চাকরিটা হয়ে যায়।’ নাজনীনের স্বামীও পুলিশে চাকরি করেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার হামিদ ওসি নাজনীন সুলতানার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মাঠপর্যায়ে কয়েকটি উপজেলায় এরই মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে বেস্ট ওসি মনে হয়েছে নাজনীন সুলতানাকে।’ কুমিল্লার বিশিষ্ট নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন বলেন, তাঁরা চান, মেয়েরা ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনে আরও এগিয়ে আসুক। এ ক্ষেত্রে যাঁকে পোস্টিং দেওয়া হবে, অবশ্যই তাঁর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ ছাড়া নারীদের সুযোগ–সুবিধার বিষয়টিও বাড়ানো দরকার।
‎নাজনীন সুলতানার প্রশংসা করলেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে তিনি (নাজনীন) দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের ইচ্ছা আছে, সামনে আরও কিছু থানায় নারীদের পদায়ন করার।