কুমিল্লা নামেই বিভাগ প্রতিষ্ঠার পথে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেইসঙ্গে এ জেলায় গঠন হচ্ছে নতুন আরেকটি উপজেলা। কুমিল্লা ছাড়াও ফরিদপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা আসছে।
আগামী মাসে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি- নিকা’র বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এ বৈঠক হতে পারে।
দীর্ঘ ৩ যুগেরও বেশি সময় যাবৎ কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কুমিল্লার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন। বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়েও বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে কুমিল্লায় ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা বিভাগের নাম ময়নামতি প্রস্তাব করলে উত্তাল হয়ে উঠে কুমিল্লা। ২০২১ সালে আবারো কুমিল্লার বদলে ‘মেঘনা’ নামে বিভাগের গঠনের ঘোষণা করেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের এই প্রধানমন্ত্রী। সেসময় তার নিজ দলসহ কুমিল্লার সকল রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো আন্দোলনে নামে। এরপর দেশে আরো কয়েকটি বিভাগ গঠন হলেও ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম অগ্রগামী অঞ্চল কুমিল্লা পিছিয়েই থেকেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রি-নিকার বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লা শহরের নামেই নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ এবং নতুন দুটি উপজেলা গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কুমিল্লা বিভাগের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর নাম প্রস্তাব করেছে। আর ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ গঠন হবে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি কুমিল্লার মুরাদনগর ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ভেঙে নতুন দুটি উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা থানার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে বাঙ্গরা উপজেলা এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়িকে ভেঙে ফটিকছড়ি উত্তর নামে উপজেলা সৃষ্টির খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার অধীনে মোট ২২টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্য থেকে বাঙ্গরা উপজেলার অন্তভূক্ত হচ্ছে- শ্রীকাইল, আকুবপুর, আন্দিকোট, পূর্বধইর পূর্ব, পূর্বধইর পশ্চিম, বাঙ্গরা পূর্ব, বাঙ্গরা পশ্চিম, চাপিতলা, রামচন্দ্রপুর উত্তর ও টনকী ইউনিয়ন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কায় বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব স্থগিত রাখা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতেও নতুন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, তথ্য-প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে নতুন প্রশাসনিক বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নেই। এটি কেবল জনসাধারনের খরচই বাড়াবে। তবে বিভাগ ঘোষণার এ সম্ভাবনাকে জনগণের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবেই দেখছেন কুমিল্লাবাসী। গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পথ ধরে গড়ে ওঠা এ সরকার দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন করবে বলে আশা তাদের। কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠাকে একটি যুগোপযোগী, ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত আখ্যা দিয়ে তারা বলছেন, এটি শুধু একটি প্রশাসনিক বিষয় নয়, কুমিল্লার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মর্যাদার প্রশ্ন।