আদেশের পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৃথক তিনটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এসব আদেশ দেন। একটি আবেদন ছিল- আগে যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল, তাদের অনেকেই অন্য মামলায় গ্রেপ্তার ছিলেন এবং এই মামলায় অভিযুক্তদের অনেকেই গ্রেপ্তারের বাইরে ছিলেন, ইতোমধ্যে এ রকম বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য আলাদাভাবে দুটি আবেদন করেছি। আবেদনে মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল এবং তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ রকম একটি আবেদনে ১৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। দ্বিতীয় আবেদনে ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তারা হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল কাফী, পুলিশ কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন, আবুল হাসান ও মাজহারুল ইসলাম। তারা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছিল এবং আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। তাদের ২০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় আবেদনে ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছিল। আবেদন পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারেন, সে কারণে সবার নাম বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তালিকার ১ নম্বরে আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। তাদের গ্রেপ্তার করে আগামী ২০ নভেম্বর হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।’তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছে মেসেজ দিতে চাই, জুলাইয়ের ঘটনায় যেসব পুলিশ অফিসার সরাসরি যুক্ত ছিলেন এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, শুধু তাদের গ্রেপ্তার করা বা গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করছি। অসাধারণ যেসব পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, আর যারা ক্রাইম অ্যাগেইনস্ট হিউমিনিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তাদের ভয়ভীতির কোনো কারণ নেই। কারণ আমরা কোনো নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইব না। শুধু যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাচ্ছি তাদের বিষয়ে চাইছি। ঢালাওভাবে কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের নাম আমরা ধারাবাহিকভাবে সবার সামনে নিয়ে আসব। হয়তো এখানে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু কোনো দোষীকে বাদ দেওয়া হবে না। অথবা কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে, অপরাধ করেছে এমন কোনো ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না।’চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার সব মামলার বাদী হবেন চিফ প্রসিকিউটর। আমাদের কাছে জনগণ বা ভুক্তভোগী পরিবার যেসব নিয়ে আসেন- এগুলো শুধু তথ্য। এই তথ্যগুলো তদন্ত সংস্থা গ্রহণ করে, পরে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সেই রিপোর্ট চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দেওয়া হয়। চিফ প্রসিকিউটর কোর্টের কাছে আবেদন করেন অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করার জন্য। এখন পর্যন্ত তিনটি মিস কেস করা হয়েছে। প্রথম মিস কেসে শেখ হাসিনা, দ্বিতীয় মিস কেসে ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এবং তৃতীয় মিস কেসে পুলিশ সদস্যদের নেওয়া হয়েছে। প্রথম যখন এই মামলা করা হয়েছে আমরা অপরাধীদের নাম প্রকাশ করিনি, যাতে তারা কেউ পালিয়ে যেতে না পারে। যেসব প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তা হলো- ছাত্র-জনতাকে সমূলে বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা, তাদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা এবং এপিসি ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নিরস্ত্র সিভিলিয়ানদের হত্যা করা। শুধু হত্যাই করা হয়নি, মরদেহগুলোকে বিকৃত করা ও গুম করা, জানাজা পড়তে না দেওয়া, ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করতে না দেওয়াসহ যত মানবতাবিরোধী অপরাধ আছে, তারা সেগুলো করেছে। এসব গ্রাউন্ডে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হচ্ছে।’জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গত ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে অনেকেই আত্মগোপনে আছেন এবং বিদেশে পালিয়ে গেছেন।