চান্দিনায় শিশু মৃত্যুর এক বছর পর কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন

চান্দিনায় শিশু মৃত্যুর এক বছর পর কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন

প্রকাশিত: ৯:১৮ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০২৫

চান্দিনায় শিশু মৃত্যুর এক বছর পর কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন

ইয়াছিন আরাফাত,(চান্দিনা) স্টাফ রিপোর্টার।।
পানি দিয়ে ঘর নোংরা করায় দুই বছরের শিশু দেবরকে গলাটিপে হত্যার পর মরদেহ বাথরুমের বালতির পানিতে চুবিয়ে রেখে অপমৃত্যুর নাটক সাজায় ভাবি।
সেই নাটক সত্যি ভেবে যথারীতি দাফন ও হয় দুই বছরের শিশু আতিকুল ইসলামের।
কিন্তু বালতির পানিতে পড়ে সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা মা কিছুতেই যেন মানতে পারছিল না। ২-৪ দিন পরিবারের সুখের মাতব থাকলেও মায়ের আর্তনাদ যেন থামছিল না। মৃত্যুর চার মাস পর প্রবাসী স্বামীর সাথে মোবাইল ফোন কথোপকথনে শিশু আতিক এর মৃত্যুর মূল রহস্য বলে ফেঁসে গেলেন ভাবি খাদিজা আক্তার শিপা।স্বামী হানিফ ও তার স্ত্রীর কথোপকথন রেকর্ড করে ফাঁসিয়ে দেন স্ত্রীকে । ওই কল রেকর্ড এর সূত্র ধরে শিশু আতিকের হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেন মা হাসিনা আক্তার। মামলা তদন্তের স্বার্থে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ দাফনের এক বছর পর কবর থেকে দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের আলকামোড়া গ্রামে।নিহত শিশু আতিকুল ইসলাম ওই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট আতিক।

মঙ্গলবার (২৭ মে) আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যাুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ দিদারুল ফেরদৌস।এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ফয়সাল আল নুর। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদৌস জানান ২০২৪ সালের ১৮ মে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলিকামোড়া গ্রামে বাথরুমের বালতির পানিতে ডুবে দুই বছরের শিশুর মৃত্যু ঘটে। প্রাথমিকভাবে সকলে বালতির পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিশ্চিত করে দাফনও করে । কিন্তু ওই ঘটনার চার মাস পর একটি কল রেকর্ডের সূত্র ধরে শিশুর মা হাসিনা বেগম বাদী হয়ে ওই বছরের ৭ অক্টোবর তাদের পুত্রবধু খাদিজা আক্তারকে একমাত্র আসামি করে কুমিল্লার বিজ্ঞ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য চান্দিনা থানায় পাঠানোর পর চান্দিনা থানা পুলিশ ১২ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ৩০২ ধারায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু ঐ তদন্তের মরদেহ ময়নাতদন্ত এবং বয়েজ রেকর্ড ফরেন্সিক না করায় আবারো তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তের স্বার্থে আমরা মরদেহ উত্তোলন করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর আবারোও মরদেহ কবর দেই।নিহত শিশু আতিকুল ইসলামের মা হাসিনা আক্তার জানান, সন্তানদের মধ্যে হানিফ আমার বড় ছেলে এবং আতিক সবার ছোট। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আমার বড় ছেলে হানিফকে বিয়ে করাই। বিয়ের এক মাস পর আমার ছেলে বিদেশে চলে যায়। ঘটনার দিন আমি পাশের বাড়িতে গেলে আমার ছোট ছেলে আতিক ঘরের পানি ফেলে দেওয়ায় তাকে গলাটিপে হত্যা করে। আমি বাড়ি এসে আমার ছেলেকে খুঁজতে থাকি কিন্তু আমাদের পুত্রবধূ কিছুই বলছিল না। কিছুক্ষণ পরে বাথরুমের দরজা খুলে দেখি আমার ছেলে বালতির ভেতরে মাথা নিচু করে পরে আছে। সে সময় সকলে বালতির পানিতে ডুবে মৃত্যু বললেও আমি চিৎকার করে বলেছিলাম আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। তখন কেউ আমার কথা শুনেনি। আমার ছেলের মৃত্যুর ১৫ দিন পর খাদিজা আক্তার তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে আমার ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে মেরে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে। স্থানীয় বাসিন্দা কুদ্দুস জানান,যখন শিশুটি মারা যায় তখন তার গলায় দাগ ছিল।সকলে তখন বালতি কিনারার আঘাতের দাগ মনে করে উড়িয়ে দিয়েছিল।পরবর্তীতে একটি কল রেকর্ডে সবকিছু পরিষ্কার হয়।এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন এলাকাবাসিও।সাথে অভিযুক্ত খাদিজা আক্তারের ফাঁসি চায় শিশু আতিকের মা সহ স্থানীয় এলাকাবাসী এবিষয়ে অভিযুক্ত খাদিজা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।