কুমিল্লার বুড়িচংয়ে এ ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল সুবিধাবঞ্চিত ৩ কিশোরের!

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে এ ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল সুবিধাবঞ্চিত ৩ কিশোরের!

প্রকাশিত: ১০:৫২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২৫

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে এ ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল সুবিধাবঞ্চিত ৩ কিশোরের!

বুড়িচং প্রতিনিধি,কুমিল্লা।।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপর সারে ১২ টার দিকে কুমিল্লা রেলস্টেশনের এক কোণে বসে এক ব্যক্তি ছেলের মরদেহ জড়িয়ে আহাজারি করছেন। তাঁর পাশে পড়ে আছে সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো মরদেহ। নাম তার সাইফুল ইসলামের বয়স সবেমাত্র ১৮। যে রেলস্টেশনেই সে প্রতিদিন বোতল কুড়াতো। আজ সেই রেলস্টেশনে পরে আছে তার মৃতদেহ। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বুধবার ভোরে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিন কিশোর-তরুণ।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ বলছে, তাঁরা সবাই সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির; পরিচয়ে ‘টোকাই’। বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে ঘুরে কুড়াতেন বোতল ও পরিত্যক্ত সামগ্রী।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে একজন সাইফুল ইসলাম। তিনি কুমিল্লা রেলস্টেশনে মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করতেন। মা-বাবা উভয়েই পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও বোতল কুড়িয়ে সংসার চালান। আরেকজনের নাম জানা গেছে তুহিন। তিনিও ছিলেন ‘টোকাই’। আর তৃতীয় জনের নাম-পরিচয় এখনো অজ্ঞাত। রেলস্টেশনের এক পাশে বসে সাইফুলের বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমার তিনটা পুত। এর মধ্যে এই সাইফুল বড়। গতকাল দুপুরে আমি সাত প্লেট ভাত আনছি হোটেল থাইক্কা। পুতে কইলো, “আব্বা, কসবা স্টেশনে যাইয়াম, বোতল টোকানোর লাইগ্যা।” আমি কইছিলাম, “পুত, তুই ভাত খাইয়া যা।” পুতে আমার কথা না হুইন্যা চইল্যা গেল। রাইতে ফিরল না, আর ফিরলই না, কখনো আর সাইফুল ফিরবেনা।’
মোখলেছুর জানান, তিনি দেবীদ্বার উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। ভিটেমাটি না থাকায় স্ত্রী-সন্তানসহ কুমিল্লা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই বসবাস করেন। বললেন, ‘ছেলের লাশ দাফনের জায়গাও নাই। রেলওয়ে পুলিশরে কইছি, লাশটা যেন সরকারিভাবে দাফন করে।’
রেলওয়ে পুলিশ জানায়, নিহতরা কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে করে আখাউড়া যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন পথশিশু। তাঁদের একজন রাজীব হোসেন জানান, ‘গতকাল বেলা দেড়টার দিকে সাইফুল, তুহিন আর একজন আমাগো কইছিল, “চলো আখাউড়া যাই।” আমি আর ইউসুফ যাইনি। তারা বলছিল বিকালে ফিরবে। কিন্তু আর ফেরে নাই।’কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক সোহেল মোল্লা বলেন, ‘তাঁদের মৃত্যু ঠিক কীভাবে হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হয়ত মাদক সেবন করে অসাবধানতায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।’
নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয়ের দুজনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরিচয় না মিললে তাঁদের লাশ দাফনের দায়িত্ব নিতে পারে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম।