কুমিল্লায় মাদক ব্যবসায়ী পরিবারের প্রতি জনরোষ,দুই নারীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা!
মুরাদনগর প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক ব্যবসায়ী পরিবারের প্রতি দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন দুই নারীসহ তিনজন। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, রুবি বেগম (৫৮), তাঁর ছেলে রাসেল (৩৫) ও মেয়ে জোনাকি আক্তার (২৭)। তারা সবাই ওই এলাকার বাসিন্দা। এদিকে, আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাসেলের ভাবি রুমা বেগমকেও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান।
এদিকে, স্থানীয় একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়,
নিহত রুবি বেগমের বিরুদ্ধে প্রায় ৮২টি মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা রয়েছে। এছাড়াও, তার ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধেও মাদক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকবার আটকও হয়েছিলেন তারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রুবি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। সম্প্রতি ঘটনার সূত্রপাত হয় এলাকায় মোবাইল চুরির একটি ঘটনা ঘিরে। এতে রুবি বেগম ও তাঁর ছেলে রাসেল অভিযুক্ত পক্ষের কয়েকজনকে মারধর করেন বলে দাবি করেন এলাকাবাসী। এরই জেরে বৃহস্পতিবার সকালে শতাধিক গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে রুবি বেগমের বাড়িতে হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি মারধরের একপর্যায়ে ঘটনাস্থলেই রুবি, রাসেল ও জোনাকি মারা যান।
নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমাদের দোকানের এক কর্মচারী কয়েকদিন আগে মোবাইল চুরি করে বশির মিয়ার বাড়ি থেকে। ওই ঘটনার জেরে বশির ও তাঁর লোকজন আমাদের কর্মচারীদের আটকে রেখে নির্যাতন করে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার শালিসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শনিবার সকালে আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। আমি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আমার শাশুড়ি তিন বছর আগে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়। স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “চুরি বা মাদক, যে অভিযোগই থাকুক, কোনোভাবেই কাউকে এভাবে পিটিয়ে মারা যায় না। এটা যে কেবল আইনহীনতা নয়, বরং মানবতাবিরোধী আচরণ।”বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, “নিহতদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই গ্রামবাসী এ হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি মূলত দীর্ঘদিনের পঞ্জীভূত ক্ষোভ। মোবাইল চুরি এখানে ইস্যু নয়। কারা এতে জড়িত, তা শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।”এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) নজির আহমেদ খান বলেন, “নিহতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও কাউকে হত্যার অধিকার কারও নেই। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক ও দণ্ডনীয় অপরাধ। ইতোমধ্যে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”এদিকে ঘটনার পর কড়ইবাড়ি গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। নিহতদের স্বজনরা শোকাহত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম ফয়সাল
মোবাইলঃ +৮৮০১৭৭৫৭২৬৬৭৯/+৮৮০১৭৬৫৭৭৮৪৪৬
ই-মেইলঃ cumillarkhobor33@gmail.com