সাইফুল ইসলাম ফয়সাল।।
কুমিল্লা নগরীতে ব্যবসা বা ভবন নির্মাণ করতে হলে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের দাবি, চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীরা অনিরাপদ হয়ে পড়েন এবং হামলা ও মারধরের শিকার হন। নগরীর কিছু এলাকায় এটি যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই এদের লাগাম টেনে না ধরা হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন বড় ধরনের অপরাধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রে জানা যায়, চাঁদাবাজি ও হামলাসংক্রান্ত ৫৫টির অধিক ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় চাঁদাবাজদের হাতে অনেকে পঙ্গু হয়েছেন। নগরবাসীর মতামত, প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা গেলে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।সূত্রমতে, নিরাপত্তার ভয়ে কেউ কেউ অভিযোগ করতেও সাহস পাচ্ছেন না। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন ব্যবসা খুললে বা কেউ ব্যবসায় ভালো করলে, চাঁদাবাজেরা চাঁদা চায়। ব্যবসা নিয়ে কারও সঙ্গে বিরোধ টের পেলে সুযোগ নেয়, আবার কেউ যদি নিরীহ হন, তাঁকে পেয়ে বসে চাঁদাবাজেরা। কোথাও কোথাও নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হলে উপস্থিত হয় চাঁদাবাজদের লোক। কখনও চাঁদা দিতে হয় নিয়মিত, কখনও মাঝে মাঝে। পাওনা আদায়কারী চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, কারো কাছে কেউ টাকা-পয়সা পাওনা থাকলে আদায়কারী চক্র পাওনাদারের পক্ষ নিয়ে হুমকি-ধমকি ও মারধরও করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে দেনাদার পাওনা পরিশোধ করলেও পাওনাদারের পকেট পর্যন্ত পৌঁছায় না। কেউ সামান্য কিছু দিয়ে সবটাই মেরে দেওয়ার অভিযোগ বিস্তর।ভ্রমণ, মাহফিল ও পিকনিক চাঁদাবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন অজুহাতে নতুন বাড়ি করতে আসা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের নিকট চাঁদা দাবি করে। সহযোগিতার নামে কৌশলে চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক গ্রুপ একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ইতোমধ্যে বিরক্ত হয়ে এক বাড়ির মালিক ফেসবুক পেইজে এর পরিত্রাণ পেতে পোস্ট দিয়েছেন।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলেছে, বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি হয় পলাতক ও কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে। চাঁদাবাজদের তালিকায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও নাম রয়েছে। কিছুদিন আগে এসব চাঁদাবাজির অভিযোগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি থেকে বহিস্কৃত বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী।স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইন্টারনেট ব্যবসায়ী, কেবল টেলিভিশনের সংযোগদাতা (ডিশ ব্যবসায়ী), দোকানদারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। কেউ মুখ খুলতে পারেন না। চাঁদা না দেওয়ায় অতীতে একাধিক ব্যবসায়ী খুন, গুম ও মারধরের শিকার হয়েছেন। এ কারণে চাঁদাবাজির ঘটনায় এখন কেউ থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে চান না। কেউ জিডি করলে সন্ত্রাসীরা দ্রুত খবর পেয়ে যায়। তাই ব্যবসায়ীরা নীরবে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের অনেকে বলছেন, তাঁদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হচ্ছে। অভিযোগ করলে উল্টো মারধর ও হামলার আশঙ্কা বেড়ে যায়।সুনির্দিষ্ট নাম ধরে বিএনপি নেতাদের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বলছেন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে পুলিশও বলছে, অভিযোগ পেলে তাঁরা কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম ফয়সাল
মোবাইলঃ +৮৮০১৭৭৫৭২৬৬৭৯/+৮৮০১৭৬৫৭৭৮৪৪৬
ই-মেইলঃ cumillarkhobor33@gmail.com