ইসলামের দৃষ্টিতে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় ইসলামের দৃষ্টিতে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় কুমিল্লার খবর কুমিল্লার খবর Cumillarkhobor প্রকাশিত: ২:৫০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৪ ইসলামের দৃষ্টিতে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় মানব সভ্যতার শুরু থেকেই একে অপরের সাথে দেখা-সাক্ষাতের সময় পরস্পরে ভাব বিনিময়ের ও সাদর সম্ভাষণের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত। বিভিন্ন জাতি নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি আর্দশ রুচি অনুযায়ী বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য বেছে নিয়েছে। যেমন, হিন্দু সম্প্রদায় পরস্পরের দেখা সাক্ষাতের সময় জয়রাম, নমস্কার ইত্যাদি বলে থাকে। খ্রিস্টান সম্প্রদায় গুড মর্নিং, গুড আফটার নুন, গুড নাইট, গুড বাই, টা-টা ইত্যাদি বাক্য ব্যবহার করে থাকে। কেমন করে পরস্পরকে সম্ভাষণ ও অভিবাদন করতে হবে তা উত্তমরূপে মানব জাতিকে শিখিয়েছে ইসলাম। যার ভাষা আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী।ইসলামের অভিবাদন পদ্ধতি কেবল বাহ্যিকভাবেই নয় বরং আত্মিক ও আভ্যন্তরীণ দিক থেকেও হৃদ্যতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তা হচ্ছে- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ আপনার উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।সালাম’ শব্দের শাব্দিক অর্থ- শান্তি ও ‘ নিরাপত্তা। তাই ‘আসসালামু আলাইকুম- এর অর্থ হল আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমার পক্ষ হতে আপনাকে নিরাপত্তা দেয়া হল। আপনিও আমাকে নিরাপত্তা দিন। ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ অর্থ, আরও অবতীর্ণ হোক আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও সমৃদ্ধি। সালাম হচ্ছে ইসলামী শরিয়াতের পরিভাষায়-একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাথে সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি।সাক্ষাতের সময় যে বাক্য দ্বারা একে অপরের ভালবাসা, বন্ধুত্ব, শান্তি নিরাপত্তা ভালবাসা সৃষ্টি হয়, শত্রুতা ও পরশ্রীকাতরতা, দূর হয়। সালামের আমাদের বাঙালী মুসলিম সমাজে এমন কিছু ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ আছেন যারা ইসলাম ও মুসলিম রীতিকে এড়িয়ে চলাকেই প্রিয়-জ্ঞান করেন। এদের কাছে ‘সুপ্রভাত, শুভরাত্রি, টা- টা’ অনেক মূল্যবান ও প্রীতিকর। এদের এতই দুর্ভাগ্য যে, ‘আসসালামু আলাইকুম’ এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ ও স্নিগ্ধতা অনুধাবন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।কল্যাণ ও দু’আ বিনিময় করে তারই নাম সালাম তথা ‘আসসালামু আলাইকুম’। সালামের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ ওমাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণ হয় এবং জান্নাতে যাওয়ার এক অপূর্ব সুযোগ লাভ করা যায়। রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার কসম। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মুমিন হতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসার জন্ম না হয়। এই পারস্পরিক ভালবাসা কিভাবে জন্মাবে তা কি আমি তোমাদেরকে বলবো?-‘তোমাদের মাঝে সালাম বিনিময়ের ব্যাপক প্রচলন কর।’ (তারগীব ও তারহীয)।আল্লাহর ‘রাসূল (সাঃ) ছোট বড় সকলকেই সালাম দিতেন। তিনি সবাইকে সকলের আগেই সালাম দিতেন। সালামে প্রতিযোগিতায় তিনি ছিলেন সব সম প্রথম। এমনকি নিজের কন্যা ফাতিমাকেও তিনি আগে সালাম দিতেন। ফাতেমা (রাঃ) একবার রাসূল (সাঃ) কে আগে সালাম দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামলেন। সেজন্য তিনি চালাকির আশ্রয় গ্রহণ করলেন- লুকিয়ে থাকলেন দরজার ফাঁকে, আব্বুজির আগমন ঘটলে আগেই সালাম দিবেন। কিন্তু হযরত ফাতেমা (রাঃ) এবারও প্রতিযোগিতায় হেরে গেলেন- কারণ রাসূল (সাঃ) আগেই সালাম দিয়ে দিলেন। আর এ কারণেই রাসূল (সাঃ) সকলের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন।ইসলামের নির্ধারিত রীতি অনুযায়ী পারস্পরিক যে সালাম বিনিময় হয়, সেটা কোন অন্তঃসারশূন্য আনুষ্ঠানিকতা নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে আল্লাহপাকের অশেষ রহমত ও বরকত। আর তা আছে বলেই আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ এই সহজ একটি বাক্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর সৌহার্দ্য ও ভালবাসায় আলোকিত হয়ে ওঠে।কিন্তু সর্বাপেক্ষা পরিতাপের বিষয় এই যে, আমাদের বাঙালী মুসলিম সমাজে এমন কিছু ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ বিদ্যমান যারা ইসলাম ও মুসলিম রীতিকে এড়িয়ে চলাকেই পছন্দ করে। এদের কাছে ‘সুপ্রভাত, শুভরাত্রি, ‘টা-টা’ অনেক মূল্যবান ও প্রীতিকর। এদের এতই দুর্ভাগ্য যে, আসসালামু আলাইকুম’ এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ ও স্নিগ্ধতা অনুধাবন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের ইসলামী যে রীতি সেটা ইসলামী সংস্কৃতির একটা অপরিহার্য অংগ। এর মধ্যে যে শাশ্বত ও ইহকাল ও পরকালের বহুমুখী কল্যাণ এবং সার্বজনীনতা বর্তমান সেটা অনুধাবন ও আমল করার তাওফিক মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে দান করুন। এবং ইসলামের আলোয় আলোকিত, পূর্ণাঙ্গ মানুষ হবার সুমতি দান করুন। আমিন আমিন আমিন। মোঃ হেলাল উদ্দিন এম এ খতীব, চাঁপাপুর পাক পাঞ্জাতন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। বাখরাবাদ, কুমিল্লা। SHARES ধর্ম ও জীবন বিষয়: ইসলামের দৃষ্টিতে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময়